Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

জলাশয়ের শত্রুখ্যাত সাকার মাছ নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবহারের কলাকৌশল

জলাশয়ের শত্রুখ্যাত সাকার মাছ নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবহারের কলাকৌশল
মোঃ মাসুদ রানা
সাকার মাছের প্রকৃত নাম সাকার মাউথ ক্যাটফিশ বা কাঁইটা সাকার বা চোষকমুখী যার বৈজ্ঞানিক নাম ঐুঢ়ড়ংঃড়সঁং চষবপড়ংঃড়সঁং। এটি খড়ৎরপধৎররফধব পরিবারের অন্তর্ভুক্ত।আশির দশকে শেঁওলা ও ময়লা পরিষ্কার করে অ্যাকোয়ারিয়ামের পরিবেশ ঠিক রাখার জন্য এই মাছ বিদেশ থেকে বাংলাদেশ আনা হয়। সাকার মাউথ ক্যাটফিশের প্রকৃত নিবাস দক্ষিণ আমেরিকায় কিন্তু বর্তমানে ভারত, চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের জলাশয়ে ব্যাপকভাবে দেখা যাচ্ছে। এই মাছের পিঠের ওপরে বড় ও ধারালো পাখনা আছে এবং দুই পাশেও রয়েছে একই রকমের ধারালো দুটি পাখনা। মাছের চামড়া খুব শক্ত ও ধারালো যার পুরোটা জুড়ে ডোড়াকাটা দাগ বিদ্যমান।  সাকার মাছের দাঁত বেশ শক্ত, অমসৃণ এবং অত্যন্ত ধারালো। এই মাছের প্রধান খাবার হলো জলাশয়ের আগাছা, জলজ পোকামাকড়, ছোট মাছ, মাছ ও অনান্য জলজ প্রাণীর লার্ভা। যেসব পানিতে দূষণের কারণে অক্সিজেনের পরিমাণ প্রায় শূন্যের কোঠায়, যেখানে অন্য কোন মাছ বাঁচতে পারে না, সেই পরিবেশে এই মাছ শুধু বেঁচেই থাকে না বরং সঠিকভাবে বংশবৃদ্ধিও করতে পারে এমনকি পানি ছাড়াও মাছটি প্রায় ২৪ ঘণ্টা বেঁচে থাকতে পারে। সাকার মাউথ ক্যাটফিশের অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর রক্তে প্রচুর পরিমাণ ল্যাকটেট বিদ্যমান যা পরিবেশের টক্সিসিটিকে দূরীভূত করে বেঁচে থাকতে পারে ফলশ্রুতিতে যে কোন জলাশয়ের অতি মাত্রার বিষাক্ততা সহ্য করে বাঁচতে পারে। বাংলাদেশের ৮ বিভাগের প্রায় সকল বিল, নদ-নদী এমনকি চাষের পুকুরেও ব্যাপকভাবে সাকার মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এ মাছের সর্বোচ্চ ওজন ১ কেজি ৯০০ গ্রাম প্রায়।
বাংলাদেশের উন্মুক্ত প্রায় সকল জলাশয়ে দিন দিন এ মাছের সংখ্যা বেড়েই চলছে যার ফলে একই সাথে জলাশয়ের ছোট প্রজাতির মাছের পরিমাণ কমছে পাশাপাশি প্রাকৃতিক পরিবেশে বংশবৃদ্ধি করা মাছের প্রজাতির সংখ্যাও ক্রমান্বয়ে কমছে। এর প্রকৃত কারণ হলো এ মাছ জলাশয়ের ছোট মাছ ও মাছসহ অনান্য জলজ প্রাণীর ডিম, লার্ভা খেয়ে ফেলে। জলজ পরিবেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য যে সকল প্রাণীর ভূমিকা অপরিসীম তাদের প্রজাতি বিনষ্ট হওয়ার পেছনে এ মাছ মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে সাকার মাছের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে দেশের জলাশয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি অদূর ভবিষ্যতে ছোট প্রজাতির মাছসহ অনান্য মাছ যারা প্রাকৃতিক পরিবেশে বংশবৃদ্ধি করে তাদের বিলুপ্তি ঘটবে। ইতোমধ্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়াধীন মৎস্য অধিদপ্তর মাছটিকে জলাশয়ের শত্রু হিসেবে ‘রেড এলার্ট’ জারি করেছে। দেশে মাছটিকে নিয়ে শংকা দেখা দেওয়ায় মৎস্য অধিদপ্তর দ্রুত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন মহলে সভা করে মাছটি যেখানে পাওয়া যাক না কেন তা মাটিতে গর্ত করে পুঁতে ফেলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। দেশে প্রাপ্ত সাকার মাছের মধ্যে প্রাপ্যতা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশের অন্যান্য নদ নদীর তুলনায় বুড়িগঙ্গা নদীতে এ মাছের সংখ্যা অনেকগুণ বেশি। বুড়িগঙ্গা নদীর যে সকল এলাকায় অন্যান্য মাছ পাওয়া দুষ্কর সেখানে এ মাছের সংখ্যা অনেক বেশি। বুড়িগঙ্গা নদীর বিভিন্ন এলাকায় নৌকা নিয়ে মাছধরা জেলেদের সাথে কথা বলে গবেষকদল দেখেন বুড়িগঙ্গায় আগে যেখানে প্রচুর পরিমাণে দেশীয় প্রজাতির  মাছ পাওয়া যেত, সেখানে সাকার মাছের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশীয় প্রজাতির মাছ আর পাওয়া যায় না। এর অন্যতম কারণ হিসেবে গবেষক দল মাছটির ক্যানিবালিজম স্বভাবকেই দায়ী করছেন। বুড়িগঙ্গায় জাল ফেললেই জালে এত পরিমাণ সাকার মাছ ধরা পড়ে যে তাদের গায়ের কাঁটার ধারালোতে জেলের জাল ছিড়ে যায়। ফলে জেলেরা আর্থিকভাবে লোকসানের সম্মুখীন হোন। তুরাগ ও বুড়িগঙ্গা নদীতে মাছ ধরে যে সকল জেলে সংসারের ভোরণ-পোষণ চালাতেন তাদের অনেকেই পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশায় প্রবেশ করে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে এ মাছের পরিধি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে জলজ পরিবেশের পাশাপাশি জেলে সম্প্রদায়ের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
দেশে সাকার মাছ নিয়ে যখন থেকে উদ্বেগ শুরু হয় ঠিক তখন থেকেই জলজ পরিবেশের জীববৈচিত্র্যের উপর এই মাছের বিরূপ প্রভাব, নিয়ন্ত্রণ ও সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে কিভাবে সাকার মাছকে সম্পদে পরিণত করা যায় তার উপর ব্যাপকভাবে গবেষণা চলমান রেখেছে ঢাকাস্থ শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। গবেষণা দলের প্রধান হিসেবে কাজ করছি। আমি মোঃ মাসুদ রানা, সহকারী অধ্যাপক, ফিশিং অ্যান্ড পোস্ট হারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগ, শেকৃবি এবং গবেষণাকর্মটির সার্বিক তত্ত্বাবধানে আছেন প্রফেসর ড. কাজী আহসান হাবীব, ফিশারিজ বায়োলজি অ্যান্ড জেনেটিক্স বিভাগ, শেকৃবি, ঢাকা। গবেষক দল দেশের ৮টি বিভাগে প্রাপ্ত সাকার মাছ সংগ্রহ করে তার বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য, ডিএনএ সিকুয়েন্সিংও বারকোডিং এবং ফাইলোজেনেটিক ট্রি অ্যানালাইসিস করে। বাংলাদেশের জলাশয়ে কত প্রজাতির সাকার মাছ ছড়িয়ে পড়েছে তা নিয়ে ব্যাপক কাজ করে দেশের অভ্যন্তরে দুই প্রজাতির সাকার মাউথ ক্যাট ফিশ বিদ্যমান। এ ছাড়াও গবেষক দল সাকার মাছের শরীরে প্রাপ্ত ভারী ধাতু (লেড, মার্কারি, ক্রোমিয়াম, আর্সেনিক) ও পুষ্টি গুণাগুণ নিয়ে গবেষণা করেন, গবেষণায় দেখা গেছে সাকার মাউথ ক্যাটফিশে প্রায় ২৫% আমিষ, ৩.৭৮% চর্বি, প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও মিনারেলস বিদ্যমান। দেশের বিভিন্ন জলাশয় থেকে প্রাপ্ত সাকার মাছের নমুনার ভারী ধাতু বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে সাকার মাছের শরীরে ভারী ধাতুসমূহ যুক্ত হয়। জলজ পরিবেশ থেকে যে জলাশয়ের মাটি ও পানিতে ভারী ধাতুর পরিমাণ বেশি সে সকল জলাশয়ে প্রাপ্ত সাকার মাছের শরীরে ভারী ধাতুর পরিমাণও বেশি। সামগ্রিক বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, যে সকল এলাকার জলাশয়ের আশে পাশে কল-কারখানা বেশি সে সকল এলাকায় যেহেতু প্রচুর পরিমাণে কল-কারখানার বর্জ্য নিঃসরণ হওয়ার যেহেতু পানিতে ভারী ধাতুর পরিমাণও বেশি; যে সকল জলাশয়ে প্রাপ্ত সাকার মাছের শরীরে ভারী ধাতুর পরিমাণও বেশি। গবেষণায় গবেষকদল বাংলাদেশের বিভিন্ন পুকুর, বিল ও নদ-নদীর মধ্যে তুরাগ ও বুড়িগঙ্গা নদীর সাকার মাছে মানব শরীরের সহনীয় মাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণে ভারী ধাতুর উপস্থিতি পেয়েছে এবং তার কারণ হিসেবে তারা ঢাকা শহরের আশেপাশে কলকারখানার সংখ্যা ও নিঃসরিত বর্জ্যরে কারণ হিসেবে দায়ী করেছেন। কিন্তু তুরাগ ও বুড়িগঙ্গা ব্যতীত অন্যান্য এলাকায় নমুনায়িত মাছের শরীরে মানবদেহের সহনীয় মাত্রার চেয়ে কম পরিমাণ ভারী ধাতুর উপস্থিতি শনাক্ত করেছেন।
গবেষণা প্রাপ্ত ফলাফল থেকে বাংলাদেশে সাকার মাছের বিস্তৃতি রোধে নিম্নলিখিত কলাকৌশল অবলম্বন করা যেতে পারে।
১. সাকার মাছ যেহেতু দ্রুত সময়ের মধ্যে বংশ বৃদ্ধি করে তাই এটিকে ধরে মাটিতে পুঁতে ফেলে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভবপর নয়, ২. সাকার মাছের প্রাচুর্য্যতা নিয়ন্ত্রণে এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে; সাকার মাছে প্রায় ২৫ শতাংশ আমিষ ও অন্যান্য পুষ্টিমান বিদ্যমান। তাই মাছটিকে সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে সম্পদে পরিণত করা সম্ভব; ৩. সাকার মাছে যেহেতু এ পর্যন্ত কোন বিষাক্ত উপাদানের উপস্থিতি প্রতীয়মান হয়নি সেহেতু মাছটিকে খাবারের প্লেটে সংযোজন করলে এবং বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা নিলে মাছটির আহরণ কয়েক গুণ বেড়ে যাবে এবং জলাশয়ে এর সংখ্যাও কমবে; ৪. মাছসহ অন্যান্য প্রাণী খাদ্যে আমিষের উৎস হিসেবে মাছের শুঁটকি ব্যবহার করা হয়ে থাকে যেখানে ৬০% আমিষ থাকে, সাকার মাছের শুঁটকিতে প্রায় ৬৫-৭০% আমিষ বিদ্যমান, ফলে সাকার মাছ প্রাণী খাদ্যের আমিষের জোগানে এক অভূতপূর্ব সাফল্য এনে দিতে পারে; ৫. যেহেতু বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদীর সাকার মাছের শরীরে মাত্রাতিরিক্ত ভারী ধাতুর উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে তাই এ দুই উৎস ব্যতীত অন্যান্য পুকুর, বিল ও নদ-নদীর সাকার মাছ ভক্ষণ বা প্রাণী খাদ্যে ব্যবহারে কোন বাঁধা নাই; ৬. মানুষ্যের খাদ্য বা প্রাণী খাদ্যের কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার ছাড়াও এটি দিয়ে বিভিন্ন প্রকার মৎস্য উপজাত পণ্য হিসেবে ব্যবহার করেও এই মাছটিকে নিয়ন্ত্রণ ও নিধন করা সম্ভব।
পরিশেষে বলা যায় যে, সাকার মাছ যেহেতু দেশের জলাশয়ের জন্য হুমকিস্বরূপ সেহেতু এটিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য জাতীয় পর্যায়ে এর বহুমুখী ব্যবহারে উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। সাকার মাছকে ধ্বংস না করে এর বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে জলাশয়ের শত্রুখ্যাত মাছটি জাতীয় অর্থনিতীতে ভূমিকা রাখতে পারবে।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা; মোবাইল : ০১৭৪৫৬২৬১৫৩, ই-মেইল : fpht@sau.cdu.bd


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon